Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

গবাদিপশুর ক্ষুরারোগ

গবাদিপশুর যেসব রোগ মারাত্মক ও অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধন করে তার মধ্যে ক্ষুরারোগ অন্যতম একটি। ফুট অ্যান্ড মাউথ (Foot And Mouth Disease) বা এফ এম ডি এটা সাধারনত ক্ষুরারোগ নামে পরিচিত। দ্বিবিভক্ত পশুর ক্ষুরে এই রোগ বেশি হয় বলে তার নাম ক্ষুরারোগ। মুখে ও ক্ষুরে ক্ষত, প্রচণ্ড জর, লালা ঝরা আর খেতে না পারা ইত্যাদি বৈশিষ্ট ধারণ করে।
 

কারণতত্ত্ব
এটা ভাইরাস দ্বারা গঠিত রোগ। এ্যাপথা (
Apthas) নামক আর এন এ (RNA) ভাইরাস এ রোগ সৃষ্টির জন্য দায়ী। এটি পিকরনাভিরিডি (picornaviridae) গোত্রের একটি উল্লেখ্যযোগ্য ভাইরাস। এ ভাইরাসের অনেক সেরোটাইপ আছে। প্রায় ৭টি সেরোটাইপ A, O, C, Sat-1,Sat-2,sat-3 এর মধ্যে O টাইপ প্রকট আকারে রোগ সৃষ্টি করে এবং C B তুলনামূলক অনেক কম ক্ষতিকর। আর এক স্ট্রেন রোগ সৃষ্টি হয়ে অন্য স্ট্রেন এ পরিবর্তিন হয়ে যেতে পারে। তাই শুধু ভ্যাকসিন (টিকা) প্রয়োগ করে এ রোগ নিয়ন্ত্রণ করা খুব কঠিন। এই ভাইরাস অধিক তাপমাত্রায় (৫০ সেলসিয়াস) ধ্বংস হয়। আর শীতল অবস্থায় ও ঠাণ্ডায় জমাট বেঁধে অনেক দিন থাকতে পারে।


এই ভাইরাস কে কিছু রাসায়নিক পদার্থ দ্বারা নিষ্ক্রিয় করা হয়, যেমন সেডিয়াম হাইড্রোক্সাইড (২%), সোডিয়াম কার্বোনেট (৪%), এবং সাইট্রিক এসিড (২%)। এছাড়া এ রোগের ভাইরাসকে ১ থেকে ২% ফরমালিনে রাখলে সহজেই ১-২ মিনিটেই মারা যায়।


বাংলাদেশে ক্ষুরারোগ
বাংলাদেশে শীতকালে ও বর্ষাকালে এ রোগ বেশি হলেও প্রায় সব ঋতুতে দেখা যায়। বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থা ও পরিবেশ গত কারণে এ রোগের প্রকট অনেক বেশি। এ ক্ষুরা রোগের কারণে ডেইরি শিল্পে ব্যাপক ক্ষতি হয় প্রতি বছর। বার্ষিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৯৭২ কোটি ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

 

রোগ ছড়ায় যেভাবে
ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত পশুর শরীরে ফোস্কার অভ্যন্তরে তরলের মধ্যে ভাইরাস বিকাশ লাভ করে। আর পশুর লালা, প্রস্রাব, গোবর, চামড়া, দুধ, ফোস্কা মধ্যস্ত তরল, শ্বাস ত্যাগ ইত্যাদির মাধ্যমে নির্গত হয়। খাবারের মাধ্যমে ও সংস্পর্শের মাধ্যমে অসুস্থ পশু থেকে সুস্থ পশুতে ছড়ায়।
পাখি এ ক্ষেত্রে উপযুক্ত ভূমিকা পালন করে, সংক্রমিত গরুর দ্বারা সংবেদনশীল গরুর প্রজনন বা নিষিক্তকরণের সময়। এ ভাইরাস আক্রান্ত পশু হতে বাতাসের মাধ্যমে শ্বাসতন্ত্রের মধ্যে দিয়ে শরিরে প্রবেশ করে। প্রায়ই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পূর্বেই যে কোনো নিঃসরণে এবং শ্বাস ত্যাগের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ ভাইরাস বের হয়।

 

রোগের সুপ্তাবস্থা
ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করার পর লক্ষণ প্রকাশ নির্ভর করে সেরোটাইপের ওপর। আর তা কমপক্ষে ২-৩ দিন ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে, খুব বেশি হলে ১০-১৪ দিনের মধ্যে বায়ু বাহিত হয়ে পশু সংক্রমিত হয়। তবে পরিক্ষামূলক ভাবে দেখা যায় ১৮-২৪ ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যেও লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে। ভাইরাস মাটিতে প্রায় ২৮ দিন, পানিতে প্রায় ৫০ দিন এবং খড় ও ঘাস জাতীয় জিনিসের মধ্যে প্রায় ২০ সপ্তাহ পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।


ক্ষুরারোগের লক্ষণ
গরু মহিষের ক্ষেত্রে

১. শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি বা জ্বর (১০৪-১০৬ ফারেনহাইট)
২. কাপুনি
৩. খুঁড়িয়ে চলা
৪. ফেনাযুক্ত আঠালো লালা ঝরা
৫. পায়ে, মুখে বা জিহ্বায় এবং ওলানের বাটে ফোস্কা ও ক্ষত
৬. বাছুরের ক্ষেত্রে লক্ষণ দেখা দেয়ার আগেই বাছুর মারা যায়।
৭. গর্ভবতী পশুর গর্ভপাত হয়ে যায়
৮. খাবারে অনীহা

 

ছাগল ভেড়ার ক্ষেত্রে
হঠাৎ বিশেষভাবে খোঁড়াতে থাকে, স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি শুয়ে থাকে, পায়ের ক্ষুরে ও মুখে ফোস্কা। ফোস্কাগুলো চিহ্নিত করা খুব কঠিন, ভেড়ির বাচ্চাকে দুধ খাওয়াতে অনীহা। ইত্যাদি

 

চিকিৎসা
ভাইরাসজনিত রোগ তাই এর বিশেষ কোনো চিকিৎসা নেই। তবে ভালোভাবে পরিচর্যাসহ কিছু ব্যবস্থা নিতে ভালো ফল পাওয়া যায়।
প্রথমে আক্রান্ত পশুকে আলাদা করে পরিষ্কার ও শুষ্ক স্থানে রাখতে হবে।
মুখে ঘা হলে ২% এলাম বা ০.০১% পটাসিয়াম পারমাঙ্গানেট দিয়ে মুখ ধুয়ে দিতে হবে দিনে ২-৩ বার। মশা মাছির উপদ্রব কমানোর জন্য এবং পায়ের ক্ষুরে ক্ষত হলে ০.০১% পটাসিয়াম পারমাঙ্গানেট দ্বারা পরিষ্কার রাখতে হবে দিনে ২-৩ বার। এ ক্ষেত্রে এফ ওম ডি কিউর (
FMD CURE)সহ অন্যান্য নামে তরল পদার্থ বেশ উপকারী ব্যবহারে। এতে ভাইরাস নিষ্ক্রিয়ও হয়ে থাকে।
 

প্রচুর লালা ঝরলে পশু দুর্বল হয়ে যায় সেক্ষেত্রে ৫% ডেক্সটোজ স্যালাইন (০.৯% Nacl) শিরায় পুশ করতে হবে। ১০০০ সিসি/৫০-১০০ কেজি ওজনের পশুকে ২-৩ দিন। পরবর্তী ইনফেকশন না হওয়ার জন্য অভিজ্ঞ ভেটেরিনারিয়ান এর পরামর্শ মতো অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করতে হবে। সেই সময় মুখে ঘা গাকায় শক্ত খাদ্য পরিহার করে নরম, তরল জাতীয় খাদ্য খেতে দিতে হবে।
 

নিয়ন্ত্রণের উপায়
ক্ষুরারোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়মিত ভ্যাকসিন ভ্যাকসিন দিতে হয়। আর এ রোগের পরিবর্তিত সেরোটাইপের জন্য ভ্যাকসিনের মাধ্যমে শুধু নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। কিছু ব্যবস্থা গত নিয়ম ও পরিচর্যা নিতে হবে। আর তা হলো-

 

১. নজরদারির ব্যবস্থা ২। খামার সব সময় পরিষ্কার-পরিছন্ন রাখা, মাঝে মাঝে জীবাণুনাশক দ্বারা মেঝে পরিষ্কার করা।
২. খামারে সবার প্রবেশ এ নিয়ন্ত্রণ আনা। বাইরে প্রবেশ নিষেধ এমন বোর্ড লাগানো।
৩. যানবাহন যতদূর সম্ভব প্রবেশ করতে না দেয়া খামারে।
৪. নতুন গরু কিনার পর কিছু দিন আলাদা ঘরে রেখে ভালোভাবে দেখতে হবে ক্ষুরারোগ আছে কিনা আর থাকলে তার ভালো মতো চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে ৫। গোয়ালঘর ও রুগ্ণ পশুর ব্যবহত দ্রব্যাদি ১-২% সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড বা ফরমালডিহাইড অথবা ৪% সোডিয়াম কার্বনেট সলুশন দ্বারা পরিষ্কার রাখতে হবে।
৬. ক্ষুরারোগে মৃত পশুকে ৬ ফুট মাটির নিচে পুঁতে ফেলতে হবে যেন ভাইরাস বাতাসের মাধ্যমে ছড়াতে না পারে। কোনো কারণেই খোলা অবস্থাতে রাখা ঠিক নয়।
৭. এ রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা নিলে খরচ অনেক কম হয়।
৮. চারণভূমি, ফাঁকামাঠ, নদীরপাড়, ঝোপ বা রাস্তার ধারে বিভিন্ন শ্রেণীর গবাদিপশুদের যতটুকু সম্ভব আলাদা রাখা।
৯. সাধারণত রোগ প্রতিরোধের জন্য ৪-৬ মাস বয়সে প্রথম টিকা এবং ২১ দিন পর বুস্টার টিকা এবং বছরে ২ বার ভ্যাকসিন প্রয়োগ কলেরা রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে বহুযোগী (
Polyvalent) ভ্যাকসিন বেশ উপকারী।
১০. দেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলের সংবেদনশীল সব পশুকে ভ্যাকসিন দিয়ে প্রতিরোধ বুহ্য তৈরি করা দরকার।
১১. গর্ভবতী পশুকে সতর্কতার সাথে টিকা দেয়া।

 

মো. মোস্তাফিজুর রহমান*

* শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক, ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স অনুষদ, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর। মোবাইল : ০১৭২৩-৭৮৬৮৭৭


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon